সফর বাতিল করছে বিদেশি ক্রেতারা
নিজস্ব প্রতিবেদক
গত সপ্তাহে রাজধানী ঢাকায় ইতালীয় নাগরিক তাবেলা সিজারকে হত্যার পর নিরাপত্তার কারণ দেখিয়ে তৈরি পোশাকের কিছু ক্রেতাপ্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি বাংলাদেশ সফর বাতিল করেছেন। এমনকি আগামী দু-এক সপ্তাহ পরে আসার কথা, এমন অনেক ক্রেতাও আসবেন না বলে জানিয়ে দিচ্ছেন দেশের ব্যবসায়ীদের। এমন এক অবস্থার মধ্যেই গতকাল শনিবার রংপুরে জাপানের নাগরিক হোসি কোনিও হত্যাকাণ্ডের শিকার হলেন।
কয়েকজন ব্যবসায়ী নেতা বলেছেন, ইতালীয় একজন নাগরিক হত্যার ঘটনার পর সেটিকে বিচ্ছিন্ন ঘটনা বলেই মনে হয়েছিল। তবে শনিবারের ঘটনায় নতুন করে জটিলতা সৃষ্টি হবে। এতে বিদেশিদের মধ্যে উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠা বাড়বে। শিগগিরই ঘটনা দুটির সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের বিচারের আওতায় না আনা হলে দেশের ভাবমূর্তি সংকটে পড়তে পারে। একই সঙ্গে বিদেশিদের পর্যাপ্ত নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সরকারকে পরামর্শ দেন এই ব্যবসায়ী নেতারা।
তৈরি পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি ফারুক হাসান বলেন, গত সপ্তাহে একটি কারখানার কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বৈঠকে বসতে ব্রিটিশ এক ক্রেতার আসার কথা ছিল। ইতালীয় নাগরিক হত্যার পর ওই ক্রেতা আর আসেননি। চলতি সপ্তাহেই আরেকটি কারখানায় ডেনমার্কের একটি ক্রেতাপ্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিদের আসার কথা ছিল। তাঁরাও আসবেন না। তিনি আরও জানান, কাল সোমবার পোশাক খাতের ক্রেতাদের সংগঠন বায়ারস ফোরামের সঙ্গে বিজিএমইএর নিয়মিত বৈঠক আছে। সেখানেও বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হবে।
জাপান-বাংলাদেশ চেম্বারের সাবেক সভাপতি আবদুল হক গণমাধ্যমকে বলেন, শুক্রবার পর্যন্ত জাপানি ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে নেতিবাচক কোনো বার্তা পাইনি। তবে শনিবারের ঘটনার পর তাঁরা কী প্রতিক্রিয়া দেখাবেন সেটি এখনই বলা যাচ্ছে না। কারণ জাপানিজরা এসব বিষয়ে খুবই সংবেদনশীল।’
অবশ্য দুই বিদেশি হত্যায় খুব বেশি উদ্বিগ্ন নন দেশের ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি আবদুল মাতলুব আহমাদ। তিনি বলেন, এ রকম ছোটখাটো ঘটনা সব দেশেই ঘটে। এতে তেমন সমস্যা হয় না। কয়েকটি দেশ রেড অ্যালার্ট জারি করায় মূলত এখানে সমস্যা হয়েছে। এতে কিছু লোক হয়তো আসবেন না, তবে অধিকাংশই আসবেন। কারণ তাঁরা জানেন, বাংলাদেশ থেকেই তাঁদের পণ্য কিনতে হবে। সব মিলিয়ে বিদেশিদের হত্যা একটা সাময়িক ধাক্কা।
এদিকে ক্রেতাদের বাংলাদেশ সফর বাতিল করাকে স্বাভাবিক বলেই মনে করেন বিশ্বব্যাংকের ঢাকা কার্যালয়ের প্রধান অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন। তিনি বলেন, ‘দুই বিদেশি হত্যাকাণ্ডের প্রভাব ছোট হবে না। এ ধরনের ঘটনায় মনস্তাত্ত্বিক প্রভাবটা অনেক বেশি পড়ে। তাই বিদেশি ক্রেতারা যদি ভ্রমণ বাতিল করেন, তাহলে সেটি অস্বাভাবিক না।’
জাহিদ হোসেন আরও বলেন, ‘ঘটনা দুটির জন্য দায়ীদের শিগগিরই চিহ্নিত করে শাস্তি না দেওয়া হলে অপপ্রচারের সুযোগ তৈরি হবে। বাংলাদেশের প্রতিযোগী ও যারা ভালো চায় না তাদের জন্য এ ধরনের ঘটনা খুবই ভালো অস্ত্র।’ তাই সরকারকে দুটি ঘটনার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের দ্রুত বিচার করতে হবে। তবেই জনগণ ভরসা পাবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
প্রতিক্ষণ/এডি/এনজে